অজিত কুমার দাশ,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি 

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দোলার বাজার ইউনিয়েনের সোহাগীপাড় গ্রামের চিত্র তুলে ধরতে 
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাতক উপজেলা শাখার সদস্য সচিব সাদেক আহমদের আহবানে এলাকবাসীর আবেদনে প্রকট রোদ্র উপেক্ষা করে গিয়েছিলাম আমরা,প্রথমে অটো দিয়ে কিছু পথ, জলপথে নৌকা দিয়ে আবার কিছু পথ পায়ে হেটেঁ । 
 গ্রামের মানুষগুলো দুর্যোগ পোহাচ্ছে দিনের পর দিন,বর্ষাকালে নৌকা হেমন্তকালে পায়ে হেটেঁ পথ চলা এযেন এক দুর্গমপথ। যেখানে রয়েছে প্রায় ২৫টি গ্রামের একমাত্র সংযোগ, সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে সোহাগীপাড় গ্রামে নেই কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে গেলে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও নেই। নেই কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা। 
বলছিলাম ছাতক উপজেলার দোলার বাজার ইউনিয়নের সোহাগীপাড় গ্রামের কথা,এমন একচিত্র বাংলাদেশে এই অজপাড়া গাঁ এযেন এক টুকরো সেন্টমার্টিন,
এসময় কথা বলছিলাম আমরা গ্রামের সুবিধা বঞ্চিত মানুষগুলো সাথে। 
এসময় উপস্থিত ছিলেন গ্রামের প্রবীন মুরুব্বি আব্দুল কাহার চাচা,আব্দুল মন্নান,আনর আলী,ইউনুছ আলী,ফয়সল আহমদ,আবদাল,নাজমুল,ছোট্ট স্কুল পড়ুয়া সোহাগ,ইকবাল,শাহীন,নাহিদসহ প্রমুখ।
গ্রামের সুবিধা বঞ্চিত  মানুষগুলোর আকুল আবেদন একটি ব্রীজের এমনিই প্রত্যাশা করেছেন তারা। ব্রীজটি অতিব জরুরী, ব্রীজটি হলে যে গ্রামগুলো সংযুক্ত হবে
বাদেজিগলী,বড়জিগলী,কুঞ্চনপুর,সোলেমানপুর
হাসনাবাজ,জলালপুর,রুকন্তাজ,আনুজানী,
জাহিদপুর এবং দক্ষিণ খুরশী, উত্তর খুরশী,ইসলামপুর,সোহাগীরপার,শুধুকালী নোয়াগাও,সিংচাপইড়,চিকনিকান্দি,রাউলী-কাঠাশলা,মঈনপুর,চেলারপার,জহিরপুর,মন্ডলপুর,সঞ্জবপুর,সোলেমানপুর সংলগ্ন গ্রামগুলোসহ দু'একটি ইউনিয়নও।
সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, যোগাযোগ ব্যবস্থার এ দুর্গতির কারণে এলাকার এসব গ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এলাকাটি কার্যত কৃষিপ্রধান। এখানে যে ফসল উৎপাদিত হয়, তা যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে কৃষক সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না। একটি এলাকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য দুটি উন্নয়ন উপকরণের সমন্বিত উপস্থিতি প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে বিদ্যুৎ। এ দুটি উন্নয়ন উপকরণ সমন্বিতভাবে কোনো এলাকায় থাকলে সেই এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
উপরোল্লেখিত এলাকাগুলোতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু শুধু উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে এ এলাকাটি এখনো উন্নয়নের ছোঁয়া পেতে ব্যর্থ হচ্ছে। বর্তমান সরকার আমলে দেশের অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এ এলাকাটি কেন যেন দৃষ্টিসীমানার বাইরে রয়ে গেছে। একটি ব্রিজ নির্মিত হলে এসব গ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র পাল্টে যেতে পারে। এলাকার মানুষজন অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। তারা কারও করুণা বা দয়া চায় না। তারা একটি ব্রিজ এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন। উন্নয়নের জন্য অনুকূল পরিবেশ পাওয়া একজন মানুষের মৌলিক অধিকার। প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতো এ এলাকাগুলো এখনো উন্নয়নের ছোঁয়াবঞ্চিত রয়েছে। 
এ এলাকায় যারা বিভিন্ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা সবাই কোনো না কোনো পর্যায়ে সোহাগীপাড় খালসংলগ্ন খাতে পাকা ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু তাদের সেই প্রতিশ্রুতি পরবর্তীকালে রক্ষিত হয়নি।  কিন্তু পরে এ এলাকার মানুষকে হতাশ হতে হয়েছে। বর্ণিত গ্রামগুলোর একদিকে রয়েছে ভাঁতগাও ইউনিয়ন  অন্যদিকে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানা তবে এ থানার যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ছাতক উপজেলার দোলার বাজার ইউনিয়েনের এ গ্রামগুলো এখনো অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে আছে। এলাকাগুলোতে বসবাসকারীদের মধ্যে অনেকেই শিল্প-কারখানা স্থাপনের মতো আর্থিক অবস্থাসম্পন্ন। তারা চাইলে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অবদান রাখতে পারেন। এ গ্রামগুলোর অনেকেই কর্মসংস্থান উপলক্ষ্যে বিদেশে অবস্থান করছেন। তারাও এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার এ দীনতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এলাকার মাটি বেশ উর্বর। এখানে সামান্য পরিশ্রমে যে কোনো ফসল উৎপাদিত হতে পারে। গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে প্রচুর ফসল ফলে।  এলাকার মানুষের সঙ্গে আলাপ করে মনে হয়েছে, তারা এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য মুখিয়ে আছে। এখন শুধু প্রয়োজন উন্নয়নের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া। এটি তাদের নৈতিক ও মানবিক দাবিও বটে। আমরা প্রত্যাশা করব, জরুরি ভিত্তিতে সোহাগিপাড় খালসংলগ্ন নদীর ওপর একটি পাকা ব্রিজ নির্মাণ করে এলাকার মানুষের চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা হবে। একটি পাকা ব্রিজ এবং পাকা সড়ক নির্মিত হলে এলাকার কর্মঠ লোকজন নিজেদের উন্নয়ন নিজেরাই করতে পারবে।
 এলাকার মানুষ সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চায়। কিন্তু একটি পাকা রাস্তা ও ব্রিজের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। এলাকার অনেকেই বলেন, এ নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনুমোদনের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, ইতোমধ্যেই ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু এসব তথ্যের কোনো বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এলাকার মানুষ শুধু এটাই জানে যে, তাদের এখনো কর্দমাক্ত নদীতল পেরিয়ে পারাপার হতে হয়। আর কতদিন তারা একটি পাকা ব্রিজের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনবে?